Search This Blog

Wednesday, April 24, 2019

আমি ক্লাস ফোরে তখন, নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে হুমায়ুন আহমেদের ৪২০পৃষ্ঠার কিশোর সমগ্র বইটা হাতে আসে। ওটাই প্রথম। 'বোতল ভূত' দিয়ে আমার গল্পের জগতে প্রবেশ, সাতদিনে নাওয়া-খাওয়া ভুলে ৪২০পৃষ্ঠা শেষ করেছিলাম।
আমার বইপড়া এভাবেই শুরু হয়। পাঠ্যবইয়ের প্রতি নেশা কোনকালেই ছিল না, আমি বরাবরই ব্যাকবেঞ্চের ছাত্র ছিলাম। এসএসসিতে ম্যাথে পাশ করেছি অংক মুখস্থ করে, বোঝেন তাহলে!

হাতের কাছে যা পেতাম পড়তাম, কাগজের ঠোঙা ছিড়ে ভেতরে কি লেখা পড়তাম, রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কাগজ পর্যন্ত পড়ে ফেলতাম। সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে সিরিয়ালে বসে থাকতে থাকতে একদিন হঠাৎ করে হাতের কাছে মাসখানেক পুরোনো একটা পত্রিকা পেলাম। সেবারই প্রথম পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আরে বই পড়ে তো শুধু আনন্দই নয় সময়ও কাটে!!

এসব ক্লাস সিক্স-সেভেনের গল্প। আমাদের সময় ঐ বয়সে কারো হাতে টাকা থাকত না। আমার বেলাতেও তাই। এদিকে বাড়ি থেকে কড়া নির্দেশ ভাল করে পড়তে হবে, ক্লাস এইটে বৃত্তি পেতে হবে। সো বাপে সোহাগ করে বই কিনে দেবে সে সম্ভাবনাও নেই। আমার বেড়ে ওঠা তো মফস্বলে, সুতরাং মধ্য-শিক্ষিত বাবা-মা পাঠ্যবইয়ের বাইরে ছেলেকে আর কোন বই পড়তে দেয়ার কথা নয়।

অগত্যা শুরু করলাম বই চুরি করা। আপুর আর দুই মামার আর খালার বাড়ি থেকে যে পরিমাণ বই আমি চুরি করেছি তার হিসেব নাই।
আমি যখন ক্লাস এইটে, আপু তখন ডিগ্রীতে পড়ে। ডিগ্রীর সিলেবাসে কিছু বাংলা উপন্যাস, গল্প ছিল। আমি সেই বয়সেই সেসব গিলে খেয়েছি।

এভাবে বই চুরি করতে গিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমি তখন ক্লাস সেভেন অথবা এইটে পড়ি। কোন এক ব্যক্তির কাছে তার লাইব্রেরীতে অনেক অযত্নে পড়ে থাকা কিছু বই চাই। উনি বেশ আনন্দচিত্তেই আমায় বই নিতে অনুমতি দেন।
আমার পরিকল্পনা ছিল পাঁচটার কথা বলে অন্তত সাত-আটটা বই মেরে দিব, আর কোনদিন ফেরত দিব না।
আবছা আলোয় সেদিন আমি "শৃঙ্গার" নামের একটা বই মেরে দিয়েছিলাম। অত্যন্ত আকর্ষনীয় কভারের কারণে প্রথমে সেটিই শেষ করি।
আমার লেভেলটা বুঝতে পারছেন? ক্লাস সেভেন-এইটেই আমার হায়ার লেভেলের সেক্স এডুকেশন হয়ে গেছে 😂

এসএসসি পরীক্ষার সময় সবাই যখন এক নিঃশ্বাসে কয়েক পাতা করে পড়ছে,  আমি তখন এসএসসির একমাসে হলুদ হিমু কালো র‍্যাব, সাতকাহন শেষ করেছি। সেটাও অভিনব কায়দায়, ধরা পড়ার ভয়ে গল্পের বই কেটে টেস্ট পেপারের ভেতরে রেখে রেখে পড়েছি।

আমার শৈশব কেটেছে মাত্রাতিরিক্ত শাসনে। এলাকার পরিবেশ ভাল ছিল না। আমার অনেক বন্ধুরা সেসময়েই সিগারেট খেত। বিকেলে খেলতে যেতে দেয়া হত না। আব্বু-আম্মু কোথাও গেলে গেটে তালা লাগিয়ে যেত।
আমায় বাধ্য হয়ে বইয়ের জগতে ডুব দিতে হয়েছে, বই'ই আমার বন্ধু, প্রেমিকা হয়েছে।
আমি বইয়ে ডুব দিতে পারি, চরিত্রে সাথে মিশে যেতে পারি খুব সহজেই।
আব্বু-আম্মুকে ধন্যবাদ, তারা এত কড়া না হলে আমার বই পড়ার নেশা কখনই এতটা প্রবল হত না।

আমি এখন বইয়ের জগতে বাস করি। আমি ঢাকায় যে রুমটায় থাকি সেখানে তিনজন থাকার কথা, আমরা দুইজন থাকি। আমি একা দুইজনের ভাড়া দেই। কারণ আমার সাথে আমার বইয়েরাও থাকে। দেড় হাজার বই।
আমি তিনদিনের জন্য বাড়ি গেলেও আমার কাঁধে একটা ব্যাগ আর হাতে একটা ব্যাগ থাকে। হাতের ব্যাগটায় সিলেকটেড কিছু বই সবসময় থাকে। এই বইগুলো ছাড়া আমার ঘুম আসে না।
আমি বেড়াতে গেলেও আমি বই সাথে নিয়ে যাই।

আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে বর্তমান জীবনে যারা আমার ভাই-বন্ধু, আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছেন তাদের প্রত্যেকের সাথে আমার সম্পর্ক শুরুই হয়েছে বই দিয়ে।
আমাদের প্রতিটি আলাপে কোথাও না কোথাও পড়াশুনা থাকেই। তাদের সাথে একদিন আড্ডা দেয়া মানে পেটভর্তি জ্ঞান নিয়ে ঘরে ফেরা।
তাদের কেউ গনহত্যা, কেউ মুক্তিযুদ্ধ, কেউ পৃথিবীর বহুবিধ ধর্ম নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন।
বইমেলা আসা মানে আমাদের ঈদ চলে আসা।

আজ বিশ্ব বই দিবস।
আরিফ রহমান ভাই তার বই দিবসের পোস্টে আমায় ট্যাগ করে বইপড়া নিয়ে অভিজ্ঞতা লিখতে বললেন।
আমি লিখতে বসে দেখলাম কয়েকটা পার্ট লেখা যাবে। শেষ হবে না।

আপনিও লিখুন। আপনার পাঠক হয়ে ওঠার গল্প। আমি ১০জন বন্ধুকে ট্যাগ দিচ্ছি, যারা বই পড়েন। আপনারা নিজেদের পাঠক হয়ে ওঠার গল্প নিজ নিজ ওয়ালে পোস্ট করুন।

No comments:

Post a Comment

সূর্য ডোবার খেলা

 সূর্য   ডোবার খেলা  এস_আর_শহীদ সাগর আকাশ মিলেছে যেখানে  রং ধনু সাত রং খুঁজে পাই সেখানে।।  সূর্য ডোবার খেলা দেখি দু'নয়নে কি দারুণ সুখে ন...