আমাদের রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোর দৈর্ঘ্য সবমিলিয়ে ১ লাখ মাইল এবং আমরা প্রতিদিনি ৫০ হাজারবার শ্বাস গ্রহণ করি! শুনে কি বিস্মিত হয়েছেন? আমাদের দেহ এমন আরও বিস্ময়কর বিষয়ের আধার এবং অবিশ্বাস্য সব কাজ করতে পারে। এখানে মানবদেহ সম্পর্কিত এমন কয়েকটি অজানা এবং বিস্ময়কর বিষয়ের উল্লেখ করা হলো…..
১. আমাদের দেহের সবচেয়ে শক্তিশালি মাংসপেশি
সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পারে সে হিসেবে মানবদেহের সবচেয়ে শক্তিশালি পেশিটি হলো মাসেটার নামের একটি পেশি। আপনার চোয়ালের পেছন দিকের গালের একটি পেশি এটি। আপনি যখন কোনো কিছু চিবিয়ে খান তখন এই পেশিটি আপনার মুখকে খোলা ও বন্ধ করার কাজ করে।
২. আমাদের তেষ্টা লাগে কেন?
আপনার দেহের মোট ওজনের মাত্র ১ শতাংশের সম পরিমাণ পানির ঘাটতি হলেই আপনার তেষ্টা পায়। মোট ওজনের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ পানি ঘাটতি হলে আপনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন। আর ১০ শতাংশের সমান পানি ঘাটতি হলে আপনি পানি শুন্যতায় মারা যাবেন।
৩. আমাদের দেহের রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোর দৈর্ঘ্য কত?
একটি শিশুর দেহে থাকা রক্তের শিরা-উপশিরাগুলো সব মিলে ৬০ হাজার মাইল হবে। আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরাগুলো সব মিলে হবে ১ লাখ মাইল লম্বা।
৪. আপনি কি আপনার স্বপ্নগুলো ভুলে যান?
হ্যাঁ, শুধু আপনি নন বরং সকলেই ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নগুলোর ৯০ শতাংশই ভুলে যান। রাতে বেশ কয়েকটি চক্রে মানুষ ঘুমায়। প্রতিটি চক্রে পাঁচটি স্তর আছে। প্রথম চার স্তরে হালকা থেকে গভীর ঘুম হয়। এই স্তরগুলোকে একত্রে বলে ধীর-তরঙ্গের ঘুম। আর ঘুমের শেষ স্তরটি আপাতবিরোধী। এই স্তরে তীব্র গতিতে চোখ নড়াচড়া করে। এই সময়টাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
৫. নারী না পুরুষ কার হৃদপিণ্ড বেশি দ্রুতগতিতে কাঁপে?
কানাডায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীদের হার্টবিট দ্রুততর হয়। একই গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের দেহঘড়ি তাদের পুরুষ সঙ্গীদের তুলনায় ১.৭ থেকে ২.৩ ঘন্টা এগিয়ে থাকে।
৬. মানুষের হাতের রেখা তৈরি হয় কখন?
শিশুরা মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই তাদের হাতে রেখা তৈরি হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃগর্ভে আসার ৬ মাস পর শিশুদের হাতে রেখা সৃষ্টি হয়।
৭. মানবদেহে প্রতি সেকেন্ডে কয়টি কোষ মারা যায়?
প্রতি মুহূর্তেই মানবদেহে কোষ তৈরি ও ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের দেহে প্রতি মিনিটে ৩০ লাখ কোষ মারা যায়। তার মানে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ হাজার কোষ মারা যায় এবং নতুন ৫০ হাজার কোষ সৃষ্টি হয়।
৮. স্নায়ুর মাধ্যমে কত দ্রুতগতিতে মস্তিষ্কে সংকেত আসে-যায়?
স্নায়ুগুলোর মাধ্যমে দেহ থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে দেহে সংকেত আসা যাওয়া করে সর্বোচ্চ প্রতি ঘন্টায় ২৬৮ মাইল গতিতে।
৯. নবজাতকরা একই সময়ে গিলতে ও শ্বাস ফেলতে পারে
একে বলে স্তন্যপান-গেলা-শ্বাসফেলা। তবে এটি এমন একটি দক্ষতা যা অনেক শিশুরই শিখতে বেশ সময় লাগে।
১০. মানুষের মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা
মানুষের স্মৃতিধারণ ক্ষমতা ২.৫ পেটাবাইট বা ১০ লাখ গিগাবাইট।
১১. দেহের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ নেই?
চোখের কর্নিয়া হলো মানবদেহের একমাত্র অঙ্গ যাতে কোনো রক্ত সরবরাহ হয় না। সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এটি। আরো বিস্ময়কর হলো, কর্নিয়ার টিস্যুগুলো অন্য যে কোনো অঙ্গের তুলনায় দ্রুত আরোগ্য হয়। ফলে চিকিৎসায় কর্নিয়ার যে কোনো সমস্যা মাত্র ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে দূর হয়।
১২. দেহের কোন অংশ নিজে আরোগ্য লাভ করতে পারে না?
দাঁত একবার নষ্ট হলে আর কখনো নিজে নিজে সুস্থ্য হতে পারে না। কারণ দাঁতের ভেতর কোনো জীবন্ত কোষ নেই। ফলে একবার ক্ষয় হলে আর দাঁত আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না।
১৩. মানুষের চুল কত দ্রুত লম্বা হতে পারে?
মানুষের চুল মাসে ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। আর গ্রীষ্ম কালে এবং ঘুমানোর সময় চুল সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ে। সারাজীবন ধরে চুল বড় করলে তা ৭২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
১৪. কত দ্রুতগতিতে ক্যালোরি কমানো সম্ভব?
দেয়ালে মাথা ঠুকলে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ক্যালোরি পোড়ে। একবার দেয়ালে মাথা ঠুকলে আপনি ১৫০ ক্যালোরি হারাবেন।
১৫. ফুসফুসের জমিন কতটুকু?
ফুসফুসের জমিন ৫০ থেকে ৭৫ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হয়। যা একটি টেনিস কোর্টের আয়তনের সমান।
১৬. প্রতিদিন আমরা কতবার শ্বাস নেই?
একেবারে ছোট্ট শিশুরা সবচেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে শ্বাস নেয়। এবং প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার শ্বাস নেয়। একটু বড় বাচ্চারা প্রতি মিনিটে ২০-৩০ বার শ্বাস নেয়। আর কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্করা মিনিটে ১২-২০ বার শ্বাস নেয়। প্রতিদিন আমরা ১৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার বার শ্বাস নিই। এই হার বিশ্রামের সময়কার।
আর সক্রিয় শারীরিক তৎপরতার সময় শ্বাস গ্রহণের হার প্রতিদিন ৫০ হাজার বারও ছুঁতে পারে।
১৭. মানবদেহের ক্ষুদ্রতম এবং দীর্ঘতম কোষ কোনটি?
মানবদেহের সবচেয়ে বড় কোষটি হল নারীদের ডিম্বানু। আর সবচেয়ে ক্ষুদ্র কোষটি হলো পুরুষদের শুক্রাণু।
মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত একটি শুক্রাণুর দৈর্ঘ্য হয় ৫০ মাইক্রোমিটার (০.০৫ মিলিমিটার বা ০.০০২ ইঞ্চি- এক ইঞ্চির ১ হাজার ভাগের দুই ভাগ)। আর একটি ডিম্বানু এর চেয়ে ৩০ গুন বড়। যা খোলা চোখেই দেখা যায়।
১৮. খাবার না খেলে নাকি না ঘুমালে মানুষ দ্রুত মারা যায়?
খাবার না খেলে মানুষের যে গতিতে মৃত্যু হবে তার দ্রুত গতিতে মুত্যু হবে না ঘুমালে। টানা ১১ দিন না ঘুমালেই মানুষের মৃত্যু হবে। ১০ দিন এর বেশি না ঘুমিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, মানুষ বেশ কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে।
No comments:
Post a Comment